নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেনীবাসীর দীর্ঘদিনের ভরসার নাম ছিল স্টার লাইন পরিবহন। এই প্রতিষ্ঠানের ফেনী জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে—এ কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। বহু মানুষ এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান পেয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজ এই অবদান আড়ালে চলে যাচ্ছে যাত্রীসেবা ও ব্যবস্থাপনাগত আচরণের কারণে।
একচেটিয়া ব্যবসার সুবিধায় স্টার লাইন যেন নিজেদের ঢাকা-ফেনী রুটের মালিক ভাবতে শুরু করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় যাত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। কাউন্টারের অনেক কর্মীর ব্যবহার দেখে মনে হয়, যেন তারা দয়া করে যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে দিচ্ছে!
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেশের নামকরা প্রায় সব বাস সার্ভিস চলাচল করে, অথচ কোনো এক অজানা কারণে ফেনীতে তাদের কাউন্টার নাগালের বাইরে। এই ফাঁকে স্টার লাইন যেভাবে কর্তৃত্ব বিস্তার করছে, সেটা শুধু অস্বস্তিকরই নয়, অন্যায্যও।
ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার, আর অভিযোগের সমাধান না করে ‘ম্যানেজ’ করার প্রবণতা—এসবই বারবার প্রমাণ করেছে, তারা যাত্রীকে গ্রাহক নয়, বোঝা মনে করে। দীর্ঘ ছুটির সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ে, প্রতিবাদ উঠে, আবার শেষ হলে তা চুপচাপ মাটি চাপা পড়ে যায়। আর যখন কেউ প্রতিবাদ করে, তখন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে বরং অভিযোগকারীর দিকেই আঙুল তোলা হয়। মনে রাখতে হবে, অভিযোগকারীদের মুখ বন্ধ করে প্রতিষ্ঠান রক্ষা যায় না—বরং ধ্বংস নিশ্চিত হয়, সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
যাত্রাবিরতির নুরজাহান, মিয়ামী হোটেলের দোকানগুলোতে এমআরপি’র চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হয়, যেটা পুরোপুরি অবৈধ। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এসব জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেখা মেলে না। এটা কি ইচ্ছাকৃত নজরদারিহীনতা? নাকি সবার জানা গোপন বোঝাপড়া?
অবশ্যই, প্রতি ৫-১০ মিনিট পরপর গাড়ি চলা একটি জেলা শহরের জন্য অসাধারণ সার্ভিস। কিন্তু সার্ভিসের গুণমান শুধু সময়ের নিয়মে নয়, সম্মান, সহানুভূতি ও জবাবদিহিতার মাধ্যমেই পরিমাপ হয়।
আর হ্যাঁ—হামলা বা ভাঙচুর কোনো সমাধান নয়। আমরা পরিবর্তন চাই সম্মানের সঙ্গে, চাপে নয়, সচেতন অবস্থানে।
যে প্রতিষ্ঠান তার যাত্রীদের সম্মান করবে না, সে প্রতিষ্ঠানের পতন একদিন অবশ্যম্ভাবী। ক্ষমতার দাপট ও অহংকার যদি সেবা প্রদানে প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, তবে একদিন সেই ক্ষমতাই তার পতনের কারণ হবে!